রাহুল শর্মা, ঢাকা
প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২৪, ১২:৫২
কর্মমুখী শিক্ষার অংশ হিসেবে দেশে চালু আছে বেসিক ট্রেড কোর্স নামে প্রশিক্ষণ কোর্স। এই কোর্সগুলো মূলত দক্ষতা অর্জনভিত্তিক। এগুলো পরিচালনা করছে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এত বছর ধরে এসব কোর্সের সনদ দিয়ে আসছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড (বিটিইবি)। কিন্তু কয়েক বছর ধরে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এনএসডিএ) এসব কোর্সের সনদ দিতে শুরু করেছে। তারা এখন প্রশিক্ষণ কোর্সের সনদ দেওয়ার পুরো দায়িত্ব চাইছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সংক্ষিপ্ত কোর্স সম্পন্ন করা প্রশিক্ষণার্থীদের সনদ দেওয়া নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলছে রশি-টানাটানি। সাম্প্রতিক সময়ে তা তীব্র আকার ধারণ করেছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, একই বিষয়ে দুই আইনে দুই সংস্থাকে কর্তৃত্ব দেওয়ায় এই জটিলতা দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতায় ৩৬০ ঘণ্টাব্যাপী বেসিক ট্রেড কোর্স পরিচালিত হচ্ছে ১৯৬৭ সাল থেকে। বর্তমানে সাড়ে তিন হাজার সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বেসিক ট্রেড কোর্স পরিচালিত হচ্ছে। বছরে দুই লাখের বেশি তরুণ-তরুণী বেসিক ট্রেড কোর্স প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকে। সর্বশেষ ১০ বছরে ২০ লাখের বেশি প্রশিক্ষণার্থীকে সনদ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
অন্যদিকে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কাজ শুরু করে ২০১৯ সালে। দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে তোলার নীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংস্থাটি গড়ে তোলা হয়েছে।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সমাপ্ত হওয়ার পর সনদ দেবে বোর্ড কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়। এখন এনএসডিএ সংক্ষিপ্ত কোর্সের প্রশিক্ষণার্থীদের সনদ দিলে দেশে-বিদেশে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। এতে পুরো সেক্টরে অরাজকতা দেখা দেবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আলী আকবর খান বলেন, বোর্ড পরীক্ষা নেয় এবং সনদ প্রদান করে। এখন সংক্ষিপ্ত কোর্সগুলোর সনদ দিতে চাইছে এনএসডিএ। বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। তবে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
অন্যদিকে এনএসডিএ বলছে, আইন অনুযায়ী পাঠ্যক্রম প্রণয়ন, বাস্তবায়নের পাশাপাশি দক্ষতা সম্পর্কিত সংক্ষিপ্ত কোর্সের প্রশিক্ষণের সনদ দেওয়া হচ্ছে। এতে আইনের কোনো ব্যত্যয় হচ্ছে না।
এ বিষয়ে এনএসডিএর নির্বাহী পরিচালক নাসরীন আফরোজ বলেন, ৩৬০ ঘণ্টার কোর্সগুলোর সনদ দিচ্ছে এনএসডিএ। এখানে আইনের ব্যত্যয় হচ্ছে না।
সনদ নিয়ে দুই দপ্তরের এই দ্বন্দ্ব নিরসনের লক্ষ্যে গত বছরের ২৪ মে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে তখনকার শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সভাপতিত্বে বৈঠকে বসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সভায় কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতায় পরিচালিত শর্ট কোর্স ও কম্পিটেন্সি বেজড ট্রেনিং অ্যান্ড অ্যাসেসমেন্ট কার্যক্রম বন্ধ হলে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সম্প্রসারণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, একাধিক কর্তৃপক্ষ হলে বিপত্তি দেখা দেওয়াই স্বাভাবিক। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও শিক্ষাবিদ মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, ‘কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কী সমস্যা, যাতে নতুন কর্তৃপক্ষকে এ দায়িত্ব দিতে হবে? একাধিক কর্তৃপক্ষ হলে এমন বিপত্তি দেখা দেবেই। এ ধরনের সমস্যার ফল ভালো হয় না।’ তিনি আরও বলেন, মূলত সংক্ষিপ্ত কোর্সগুলো চালু করার প্রধান উদ্দেশ্য হলো দেশে ও বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি। এভাবে চললে এসব কোর্সের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।